• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন

শিক্ষকদের যেমন দেখতে চাই -২

এলিজা শরমিন / ১৫৩ বার দেখা হয়েছে
সর্বশেষ : রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪

ঘটনা -১ আমার মেয়ে যখন কলেজে ভর্তি হলো তখন নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আমাকে যেতে হয়েছিল। দুপুর তিনটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। আমি তার আধাঘন্টা আগেই চলে গিয়েছিলাম মেয়েকে নিয়ে। প্রচন্ড গরমে মাঠের মধ্যে রাখা চেয়ারে বসে আছি। যেহেতু আর্মিদের অধীনে কলেজ তাই আমি ভেবেছিলাম নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠান শুরু হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড়ঘন্টা পরে অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রিন্সিপ্যাল বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। তার বক্তব্য শুনে আমি হতভম্ব! বক্তব্যের পুরোটা জুড়েই ছিল  ছাত্রীরা তাকে কখন -কিভাবে ঈঙ্গিতপূর্ন আচরণ করতো। রাত- বিরাতে ফোন করে কি কি কথা বলতো! এই ছিল পুরো বক্তব্য। কোথাও দিক নির্দেশনামূলক বা মোটিভেশনাল কোনো কথা ছিল না! একজন শিক্ষকের আসলেই কি এই ধরনের বক্তব্য গ্রহনযোগ্য? শিক্ষার্থীরা তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি শিখবে!

ঘটনা -২ ওই একই প্রতিষ্ঠানে আমার মেয়ের একজন সহপাঠী একটু স্বাস্থ্যবতী ছিল। তাই ক্লাস টিচার (যিনি নিজেও একজন মহিলা)  তাকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে নানান কটুক্তি করতেন। এমনও বলতেন, “তোমাকে ওপর থেকে ফেলতেও তো তিনজন লাগবে।” কোনো শিক্ষক এইভাবে কোনো শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারেন না। তার কাজ সঠিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে তোলা।

ঘটনা -৩ আমার মেয়েরা যখন স্কুলে পড়তো তখন একজন শিক্ষিকা ক্লাসে পড়ানো বাদ দিয়ে নানান হাবিজাবি গল্প করে সময় কাটাতেন। গল্পের কিছু নমুনা হচ্ছে তার বেতন দিয়ে কতগুলো শাড়ি +গয়না কিনেছেন, কোথায় শপিং করতে যান ইত্যাদি।

ঘটনা -৪ আমি একটা জেলায় ছিলাম। মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্কুলে ক্লাস নিতে যেতাম। অনেকটা গেস্ট টিচারের মতো। যেখানে ইতিহাস, দর্শন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলা হতো। এরকম একটা স্কুলে একদিন গেলাম। তাদের লাইব্রেরীর জন্য কিছু ভালো মানের বইও নিয়ে গেলাম যাতে শিক্ষার্থীদের  পড়ার আগ্রহ জন্ম নেয়। সেখানকার প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হলো। সেই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আমি হতবাক! তারা পাঠ্যবইয়ের বিষয়গুলো তো বুঝেই না এমনকি সাধারণ কোনো ফুল -ফলও চেনেনা। তারা নবম-দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছিল! আমি আশ্চর্যের পর আশ্চর্য হলাম! আরও আশ্চর্য হলাম এই দেখে যে, ওই শিক্ষক প্রতিদিন  সকালে উঠে ফেসবুকে নিজের মুখের ছবি পোস্ট দেন! যার স্কুলের শিক্ষার্থীরা কিচ্ছু জানে না তার এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই!

এই কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজন শিক্ষককে বলছিলাম, আপনার ঘরে একটা বিশ্বের মানচিত্র রাখা উচিত। তিনি আমাকে বললেন, পুরাতন একটা আছে। আমি অবাক হলাম তার কথা শুনে! তার জানাই নাই, বিশ্বের মানচিত্র কিছুদিন পর পর পাল্টে যায়। কোনো নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে, কোনো কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার পরিবর্তন হয় এবং আরও কিছু পরিবর্তীত হয়। এই সাধারণ বিষয়গুলো জানার জন্য খুব বেশি পড়াশোনার দরকার হয় না। কিন্তু তাও তার জানা নাই!

এরকম হাজারো সত্যিকার ঘটনা দেওয়া যাবে। ভালো শিক্ষক যে নেই এটা আমি কখনোই বলবো না। আছে অবশ্যই তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য! শিক্ষকেরা একটা বিষয় জানেন না তা হলো, তাদের সামনে পুরো একটা ভবিষ্যত জেনারেশন পড়ে আছে। এত ক্ষমতা কোন সেক্টরের কর্মকর্তাদের আছে বলতে পারেন? আপনাদের সামনে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, জাজ, পাইলট ইত্যাদি সব পেশার ভবিষ্যত প্রজন্ম বসে আছে! শুধু আপনাদের কাজ হচ্ছে তাদের সেই রাস্তাটা দেখিয়ে দেওয়া, মনোবল তৈরি করা, আলোর সন্ধান দেওয়া। নিজের ক্ষমতাকে চেনেন! আপনার ছাত্র -ছাত্রী যত বড়ই হোক না কেন আপনাকে সে যে কোন অবস্থাতেই স্যার বা ম্যাডাম ডাকতে বাধ্য হবে! কতটা সম্মানের জায়গা এটা বুঝতে পারছেন আপনারা! কিন্তু সেই সম্মানের জায়গাটা আপনাদেরই তৈরি করতে হবে। নিজের জ্ঞান, পরিশ্রম, ব্যক্তিত্ব, অভিভাবকত্ব দিয়ে সম্মানের জায়গা দখল করতে হবে। পৃথিবীতে ফ্রি ফ্রি কিছুই পাওয়া যায় না। সবকিছুর জন্য মূল্য চুকাতে হয়। সম্মান চাইবেন অথচ সেটা অর্জনের চেষ্টা করবেন না, তা কি হয়!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর...