যশোরের কেশবপুরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদের উপর বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। দু’পারের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার মানুষ কেশবপুরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ দাবি করে আসলেও আজও হয়নি ব্রিজ। কপোতাক্ষ নদের দু’পারের মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, সম্প্রতি সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক স্রোত বেড়ে গেলে উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কপোতাক্ষ নদের ওপারে সাতক্ষীরা জেলার তালার সারসা, সরুলিয়া, সেনেরগাতি, ধানদিয়া, কেশনগর, পাঁচপাড়াসহ ২০ থেকে ২৫ টি গ্রামের মানুষ সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার সাগরদাঁড়ির হাটে আসেন মালামাল বেচাকেনার জন্য। এছাড়া সাগরদাঁড়িতে রয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওপার থেকে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ শিক্ষকরাও যাতায়াত করতেন ওই সাঁকো দিয়েই। সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির উদ্যোগে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে সাঁকোটি তৈরি করেন যাতায়াতের জন্য।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে মধুমেলার উদ্বোধন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই অনুষ্ঠানে কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে মধুপল্লী ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দেন। এগুলো বাস্তবায়ন হলেও ব্রিজটি নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মিত চলাচলের জন্য একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি স্রোতে ভেসে আসা কচুরিপানার চাপে ভেঙে পড়ায় দু’পারের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। যার কারণে প্রায় এক মাস ধরে নদের দু’পারের মানুষ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাঁশের সাঁকোটি পুনঃসংস্কার করতে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় কপোতাক্ষ নদের দু’পারের মানুষের মনে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দু’পারের মানুষ পারাপার হচ্ছেন। এখানে প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে সাগরদাঁড়িতে। যার অধিকাংশ মানুষই যাতায়াতের জন্যে ওই সাঁকোটি ব্যবহার করে থাকে। ফলে ওই এলাকাবাসীকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
কপোতাক্ষ নদের ওপারে সারসা গ্রামের বাসিন্দা কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র জানান, বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে।
সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক আহমেদ বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার মানুষ সাগরদাঁড়িতে কপোতাক্ষ নদের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ দাবি করে আসছেন। ব্রিজ নির্মাণ হলে মানুষের আর যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, গত বছর প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয় করে সাঁকোটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক স্রোতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙ্গে গিয়ে মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। হাটে মালামাল আনতে নদের ওপারের মানুষ ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হচ্ছে। প্রায় এক মাস আগে সাঁকোটি ভেঙ্গে গেলেও অর্থ কষ্টে মেরামতে বিলম্ব হচ্ছে। বিষয়টি সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক স্রোত বেড়ে উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানার চাপে ভেঙে যাওয়া বাঁশের সাঁকোটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তুহিন হোসেন বলেন, সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের ওপর ‘সাঁকোটি স্থানীয় জনগণ নির্মাণ করেছিলেন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত সাঁকোটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে আলোচনা করা হয়েছে।