বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে যশোরে গত ৪ দিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। একটানা ৪ দিনের ভারী বৃষ্টিতে পানির নিচে চলে গেছে যশোরের সব ফসল। বিশেষ করে আমন ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে নষ্টের উপক্রম হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ এবং পানি নেমে গেলে অন্যান্য ফসল রক্ষা হলেও অপূরণীয় ক্ষতি হবে সবজির। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান ও সবজি গাছে পচন ধরে গেছে। বৃষ্টির ফলে শহরসহ বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাটি আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ৪ দিনে যশোরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩২৭ মিলিমিটার।
সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, যশোর শহরের অধিকাংশ রাস্তায় পানি জমে গেছে, যাতে মানুষ ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে ড্রেন ছাপিয়ে উঠে গেছে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ ঘর থেকে বের হননি। কর্মে নামতে পারেননি শ্রমজীবীরা। গোটা জেলার ক্ষেতের ফসল এখন পানির নিচে। বিশেষ করে আমন ধান ও সবজি গাছে পচন ধরেছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডক্টর সুশান্ত কুমার তরফদার জানিয়েছেন, যশোরে চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগস্টের শেষের অতি বৃষ্টিতে ২১০ এবং এখন তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমির আমন ধান প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আবাদকৃত ৭ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির আগাম সবজির মধ্যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ৪৫০ হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আলআমিন সুমন বলেন, মাঠের ধান শেষ। আগস্ট মাসের শেষের দিকে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়। আবার এই ভারী বৃষ্টিতে ধান গাছের উপরে পানি থৈথৈ করছে। মাঠে ধান ঘরে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
যশোরের সবজির রাজধানীখ্যাত চুড়ামনকাটির দৌলতদিহি গ্রামের সবজি চাষী জামাল হোসেন বলেন, এখন ক্ষেতে পটল, সিম, বাঁধাকপি, বেগুন ও মুলা রয়েছে। তাদের সবজির আবাদ রয়েছে ৩০ বিঘা জমিতে। এই বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে সবজি গাছে পচন ধরেছে। ২/১ দিনের মধ্যে বৃষ্টি থামলে ও পানি নামানো গেলে উঁচু জায়গার ক্ষেতের সবজি কিছুটা রক্ষা করা যাবে। কিন্তু বেশির ভাগ সবজি রক্ষা হবে না। নতুন করে আবাদ করা লাগবে। এমনিতে বীজসহ সব উপকরণের দাম অনেক বেশি। তার ওপর নতুন করে আবাদ করে যে খরচ হবে তার দাম না পাওয়ার আশংকাই বেশি। শেষমেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকই।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডক্টর সুশান্ত কুমার তরফদার বলেছেন, সবজি ও ধানের কিছুটা ক্ষতি হবে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এখনই নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তিনি ফসলের ক্ষেত থেকে পানি বের করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষকদের।