ওদের ঘরে এখন শারদ উৎসবের বর্ণিল ছটা। শুধু অপেক্ষার প্রহর গোনা কখন বেজে উঠবে ঢাক ঢোল আর শঙ্খ ধ্বণি। দুদিন আগেও যাদের কপালে দেখা দিয়েছিল চিন্তার ভাঁজ, তারাই এখন নির্ভার হয়ে দুর্গা মায়ের আগমণের প্রতীক্ষায়। যশোর জেলা প্রশাসনের এক মানবিক উদ্যোগে বদলে গেছে এই প্রেক্ষাপট। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলামের হাত থেকে নতুন পোষাক আর খাদ্য সামগ্রী পেয়ে আবেগে চোখের কোনা ভিজেছে যশোরের ঋষি সম্প্রদায় আর সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মধ্যে। বিশেষ করে অনুরাধা, অর্পণ, কৃষ্ণ কিম্বা স্পর্শের মতো ছোটদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর প্রকৃতিতে কাশফুলের সমারোহ জানান দিচ্ছে শরৎ এসে গেছে। শরৎ মানেই শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহত ধর্মীয় উৎসব। ধনীদের জন্য বর্ণিল আয়োজনে কোন সমস্যা না হলেও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কখনো উৎসবের হরষ রূপ নেয় বিষাদে। দুর্মূল্যের এই বাজারে নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে তাই উৎসব আসলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। বড়দেরকে বোঝানো গেলেও বিপত্তি বাঁধে পরিবারের ছোটদের নিয়ে। আশপাশে সবাই যখন নতুন জামা জুতো পরে উৎসবে যোগ দেয় তখন ছোটদের আর্থিক অনটনের বিষয়টি বোঝানো কতটা যন্ত্রণাময় তা কেবল ভুক্তিভোগিরাই জানে। উৎসবে সন্তানদের নতুন কিছু না দিতে পারা বাবা মায়ের যাতনা শুধু অর্ন্তযামীই উপলব্ধি করতে পারেন। যশোরের ঋষি সম্প্রদায় আর সুবিধাবঞ্চিত এমন দু’শ পরিবারের পাশে পরম মমতায় স্বজন হয়ে দাঁড়িয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন।
জেলা পরিষদের সহযোগিতায় শনিবার বিকেল চারটেয় কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে বসেছিল এক প্রাণের মেলার। পূঁজোয় নতুন জামা আর খাদ্য সহায়তা নিতে মা বাবার সাথে হাজির অর্ধশত কচিমুখ। যাদের অনেকেই এই প্রথম এসেছে কালেক্টরেট সভাকক্ষে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতির মধ্যেও শিশুদের প্রাপ্তির আতিশায্যে চোখে মুখের খুশির ঝিলিক দৃষ্টি কাড়ছিল বারবার।
এই উৎসব তাদের জীবনের স্মরণীয় উৎসব বলেছেন সহায়তা প্রাপ্ত পরিবারগুলি। উপহার সামগ্রীর চাইতেও তাদের কথা যে জেলা প্রশাসক মনে করে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন এই কথাটি বলতে গিয়ে বিধীকা দাসের মতো অশ্রুস্বজল হয়েছেন আরো অনেকে। তাদের এই আনন্দ অশ্রু ছুঁয়ে গেছে উপস্থিত সকলকে। তাদের কণ্ঠেও অণুরণিত হয়েছে যশোর জেলা প্রশাসনের এই মানবিক কর্মসূচি।