আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রত্যেকটা অধিকারের সাথেই তথ্য অধিকার সংযুক্ত। এ অধিকারটা অন্যান্য অধিকারের মত নয়। তথ্য অধিকার ছাড়া সব অধিকার মূল্যহীন। তবে তথ্য অধিকার নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। রোববার এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ভবনে তথ্য অধিকার ফোরাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার-এনজিওদের সহায়ক ভূমিকা শীর্ষক’ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বহুল আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন অচিরেই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে বলেন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে একটা রিফর্ম প্রয়োজন. দ্রুতই সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমি আমার মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কাজ করব। এ সময় তিনি আরো বলেন, দেশের আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে তথ্য কমিশন বা মানবাধিকার কমিশনের কিন্তু কোনো কার্যক্ষমতা থাকবে না। যারা তথ্য অধিকারের কথা বলেন, তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাও বলতে হবে। গুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সভায় বলেন, তথ্য অধিকার আইনটি দুর্নীতি, দুর্বত্তায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে এটাকে আমরা আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে পারি নাই। যেমনটা ভারতে হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। তিনি বলেন, তথ্য চেয়ে যেসব আবেদন করা হয় এগুলো খুবই সাধারণ। আমাদের বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করতে হবে। আমি নিজে বড় বড় কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান তথ্য কমিশন সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার কর্তৃক এককভাবে যেন তথ্য কমিশন নিয়োগ না দেওয়া হয়। সরকার কিছু নাম প্রস্তাব করতে পারে। এবং সেই নামের ওপর ভিত্তি করে অংশীজনদের মতামত নিয়ে তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে। ২০০৯ এর তথ্য অধিকার আইনের অনেক পরিবর্তন দরকার। এটাও সরকার এককভাবে করবে না। এটি তথ্য অধিকার ফোরামের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে। যাতে গণমাধ্যমসহ সবপক্ষ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
অন্যদের মধ্যে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাইদুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১ মো. আবু সাইদ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য অধিকার ফোরামের আহবায়ক শাহীন আনাম। তিনি তথ্য অধিকার ফোরামের কার্যপরিধি পর্যালোচনা করে দেশব্যাপী এর সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রসার এবং সেজন্য সব অংশীজনের অংশগ্রহণে জাতীয় একটি সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা, তথ্য অধিকার আইন নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি ও এনজিও কর্মকর্তাদের তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া, ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা, তথ্য অধিকার সংক্রান্ত অভিযোগের যথাযথ নিষ্পত্তি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্যপ্রাপ্তিসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেন।
সভায় সঞ্চালনা করেন আইস্যোশালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনন্য রায়হান। অন্যদের মধ্যে এনজিও ব্যুরোর পরিচালক আনোয়ার হোসেন, মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর সভায় বক্তব্য দেন।